জন্ম বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, মৃত্যু সুইজারল্যান্ডের টলোশেনাজে। নাগরিকত্বটা ব্রিটেনের, কিন্তু কাপিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড। নাম অড্রে হেপবার্ন, কালজয়ী অভিনেত্রী। অভিনয় জীবনে চমৎকার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে দ্যুতি যেমন ছড়িয়েছেন, তেমনি অভিনয় জীবনের শেষে কাজ করেছেন জাতিসংঘ শিশু তহবিল সংস্থা- ইউনিসেফের হয়ে শিশুদের সুরক্ষায়। জিতেছেন এমি, গ্র্যামি, অস্কার এবং টনি পুরষ্কার, যেই কৃতিত্ব জুটেছে মাত্র ষোলজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর ভাগ্যে। এই সুঅভিনেত্রীর পাঁচটি আলোচিত চলচ্চিত্র নিয়ে এই আয়োজন।
ব্রেকফাস্ট এট টিফ্যানি’স (১৯৬১)
১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রে অড্রে হেপবার্ন অভিনয় করেছেন হলি গোলাইটলি নামে নিউইয়র্ক শহরের এক তরুণীর চরিত্রে, যিনি স্বপ্ন দেখেন এক ধনাঢ্য পুরুষ কোনদিন তার প্রেমে পড়বে। বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড টিফ্যানির শোরুমে ঘুরে ঘুরে, সিং সিং কারাগারে এক কয়েদির সাথে দেখা করতে যাওয়া এবং উঁচু দরের রেস্তোরাঁতে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ব্যক্তিদের সাথে রাতের খাবার খেতে যাওয়াই হয়ে পড়ে তার নিত্যদিনের কাজ। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার পরিচয় হয় পল ভারজাক নামের এক হতাশাগ্রস্থ লেখকের সাথে, যে কি না আবার তার প্রতিবেশি। এক পর্যায়ে পল প্রেমে পড়ে যায় হলির কিন্তু হলির ধারণা ব্রাজিলিয়ান বিলিওনিয়ার হোসে ডা সিল্ভা পেরেইরা তার জীবনের প্রকৃত প্রেম। এভাবেই এগিয়ে যায় গল্প। চলচ্চিত্রটি পরিচলনা করেছেন ব্লেক এডওয়ার্ডস।
রোমান হলিডে (১৯৫৩)
অড্রে হেপবার্নের সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র সম্ভবত রোমান হলিডে। এখানে তিনি অভিনয় করেছেন রাজকুমারী অ্যানের চরিত্রে, যিনি রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন ইতালির রাজধানী রোমে। রাজপরিবারের কঠোর নিয়মকানুনের বেড়াজালে ক্লান্ত হয়ে স্বাধীন জীবনের আশায় “ছুটি” নিয়ে পালিয়ে চলে যায় রোম শহর ভ্রমণে যেখানে তার সাথে দেখা হয় জো ব্র্যাডলি নামের একজন সাংবাদিকের সাথে। অ্যান তার সামনে রোমে ছুটি কাটাতে আসা একজন সাধারণ ছাত্রী হওয়ার অভিনয় করলেও জো তাকে ঠিকই চিনে ফেলে এবং ফন্দি আটে রাজকুমারীর কাছ থেকে চমৎকার গল্প বের করার। তবে সমস্যা একটাই- জো নিজেই রাজকুমারী অ্যানের প্রেমে পড়ে যায়। চলচ্চিত্রটির পরিচালক ও প্রযোজক উইলিয়াম উইলার।
শ্যারেড (১৯৬৩)
এই চলচ্চিত্রে অড্রে হেপবার্ন অভিনয় করেছেন রেজিনা ল্যাম্বার্টের চরিত্রে যিনি ইউরোপের পর্বতমালা আল্পসে স্কি করতে গিয়ে এক অচেনা পুরুষের প্রেমে পড়ে যান। পরে প্যারিসে ফেরত গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে তার স্বামী চার্লস খুন হয়েছেন। পরবর্তীতে সিআইএ এজেন্ট হ্যামিল্টন বার্থোলোমিউ অনুসন্ধান করে বের করেন যে চার্লস যুদ্ধের সময় প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার আত্মসাৎ করেছিলেন। রেজিনা হঠাৎ নিজেকে এক আর্থিক কেলেঙ্কারির বেড়াজালে আবিষ্কার করেন। সেই অর্থের সন্ধানে তার পিছু নেয় অনেক সন্দেহজনক মানুষ, যদিও সেই অর্থের ব্যাপারে রেজিনা নিজেই কিছু জানেনা।
হাউ টু স্টিল আ মিলিয়ন (১৯৬৬)
উইলিয়াম উইলারের পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে একজন শিল্পী এবং তার মেয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরে। শিল্পী চার্লস বনেট বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পকর্মের নকল তৈরির একজন ওস্তাদ। তার সংগ্রহে আছে রেমব্রান্ট থেকে গগিনের বিভিন্ন শিল্পকর্মের হুবুহু নকল যাকে সে বিক্রি করে তাদের আসল শিল্প কর্ম হিসেবে। তার মেয়ে নিকোল এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেও যখন একটি জাদুঘরে চার্লসের সংগ্রহে থাকা একটি শিল্পকর্ম নকল প্রমাণিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়, তখন নিকোল তার বাবাকে রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে। এভাবেই এগিয়ে চলে গল্প। নিকোলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অড্রে হেপবার্ন।
ফানি ফেস (১৯৫৭)
এই চলচ্চিত্রের গল্প জো স্টকটোন নামের নিউইয়র্কের এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অড্রে হেপবার্ন। একদিন এক আলোকচিত্রী তার ছবি তুলে প্যারিসের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার পল ডুভালের কাছে পাঠায়। পল ডুভাল ছবি দেখে জোকে প্যারিসে আমন্ত্রণে সে তার স্বপ্নের প্রিয় শহরে ভ্রমণের সুযোগ পায় এবং সেখানের এক ফ্যাশন শোতে অংশ নিতে যায়। তবে বিপত্তি বাঁধে অন্যখানে। ভ্রমণের মাঝেই সবার অগোচরে সে তার বিখ্যাত অধ্যাপক ফ্লস্ট্রের লেকচারে অংশ নিতে যায়। এগিয়ে চলে গল্প। এই রোমান্টিক কমেডি ধাঁচের চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন স্ট্যানলি ডনেন।
লেখাটি লিখেছেন শাফকাত আমিন ইনান ও ইশান চৌধুরী।
GIPHY App Key not set. Please check settings