in ,

বাংলা চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ

বাংলা চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ - কুইজার্ডস (Quizards)

বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্র মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি। চলচ্চিত্র সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের ধারকও বটে। তাই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণে মুক্তিযুদ্ধ বরাবরই আকর্ষণীয় একটি বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের ইতিহাসকে ধরে রাখতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের শুরু পাকিস্তান আমল থেকেই। তবে স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক গল্প বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে যোগ করে ভিন্ন এক মাত্রা।

চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা

স্বাধীনতার পর পর ১৯৭২ সাল থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছিলো ‘ওরা ১১ জন’, যার পরিচালক ছিলেন প্রখ্যাত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। এই ছবির অধিকাংশ কলাকুশলীই ছিলেন সদ্য মুক্তিযুদ্ধফেরত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছবিটির কাহিনীছিলোমূলত ১৯৭১ সালে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গঠিত গেরিলাদলের পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানকে কেন্দ্র করে। এই এগারোজনের দশজনই বাস্তবের মুক্তিযোদ্ধা, যারা পেশাদার অভিনয় শিল্পী ছিলেন না। এছাড়াও এই বছরে আরও তিনটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়- সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’ এবং আনন্দের ‘বাঘা বাঙালি’।

১৯৭২ সালের ৮ নভেম্বর মুক্তি পায় সুভাষ দত্তের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ড, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ এবং প্রতিবাদে বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রামকে কেন্দ্র করে এই চলচ্চিত্র নির্মিত। যুদ্ধশিশুর মত বিষয় বেশ গুরুত্বের সাথে ফুটে উঠেছে এই চলচ্চিত্রে। মমতাজ আলীর পরিচালনায় ‘রক্তাক্ত বাংলা’ এবং আনন্দ-র পরিচালনায় ‘বাঘা বাঙালী’ ছবি দুটো মুক্তি পায় ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তবে দুটি ছবিই সমালোচিত হয়েছিল অ্যাকশন দৃশ্য আর মোটা দাগে ধর্ষণের দৃশ্য চিত্রায়ণের কারণে।

১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় আলমগীর কবির পরিচালিত ‘ধীরে বহে মেঘনা’, আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ এবং খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি চলচ্চিত্র- চাষী নজরুল ইসলামের ‘সংগ্রাম’, আনন্দের ‘কার হাসি কে হাসে’ এবং নারায়ন ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’। ‘আলোর মিছিল’ ছবিটির মাধ্যমে ঢাকার চলচ্চিত্রে নাম লেখান কালজয়ী অভিনেতা ফারুক। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় হারুনুর রশিদ পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ ছবিটি, যা প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে।

মাঝে বিরতি

মূলত রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং অস্থিরতার কারণে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তেমন কোন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। তবে এসময় তরুন কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা সমালোচকদের কাছে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। এসব স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো – মোরশেদুল ইসলাম এর ‘আগামী’ (১৯৮৪) ও ‘সূচনা’ (১৯৮৮), আলমগীর কবীর এর ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ (১৯৮৫), আবু সায়ীদ এর ‘ধূসরযাত্রা’ (১৯৯২) ইত্যাদি।

আবার যাত্রা শুরু

নব্বই দশক থেকে আবারো পুরো দমে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ। এই দশকের উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে রয়েছে- আগুনের পরশমণি (১৯৯৪)- হুমায়ূন আহমেদ, মুক্তির গান (১৯৯৫)- তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, এখনো অনেক রাত (১৯৯৭)- খান আতাউর রহমান, হাঙ্গর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭)- চাষী নজরুল ইসলাম, মুক্তির কথা (১৯৯৯)- তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ ইত্যাদি। ১৯৯৪ সালে আগুনের পরশমণি ছিলো প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। অন্যদিকে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ নির্মিত ‘মুক্তির গান’ চলচ্চিত্রটি ছিলো মূলত একটি প্রামাণ্যচিত্র যা ১৯৭১ সালে মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লেয়ার লেভিন এর ধারণ করা ফুটেজ থেকে তৈরি করা হয়েছিল। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের গল্প অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রটি, যা সর্বস্তরের দর্শকের কাছ থেকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

একুশ শতকেও থেমে থাকেনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা। তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামলছায়া’, তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘ধ্রুবতারা’ ও ‘মেঘের পর মেঘ’, মোরশেদুল ইসলামের ‘খেলাঘর’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘রাবেয়া’ ও ‘জীবন ঢুলী’, নাসিরউদ্দীন ইউসুফের ‘গেরিলা’, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’, আরেফিনের ‘ভুবন মাঝি’ ইত্যাদি একুশ শতকে নির্মিত উল্লেখযোগ্য কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ‘জয়যাত্রা’, ‘গেরিলা’ এবং ‘অনিল বাগচির একদিন’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহন করে এবং ১৭ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১১-এ নেটপ্যাক পুরস্কার অর্জন করে বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।

একুশ শতকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে অনেক। তার মধ্যে কাওসার চৌধুরীর ‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’ (২০০২), তানভীর মোকাম্মেল-এর ‘স্মৃতি ৭১’ (২০০৪), ‘তাজউদ্দীন: নিঃসঙ্গ সারথি’ (২০০৭), ‘১৯৭১’ (২০১১), অশোক কর্মকার ও মানজারে হাসীন-এর ‘কালরাত্রি’ (২০০৭) উল্লেখযোগ্য।

Loading

USAID Logo - কুইজার্ডস (Quizards)

This article is made possible by the support of the American People through the United States Agency for International Development (USAID.) The contents of this article are the sole responsibility of the Quizards project and do not necessarily reflect the views of USAID or the United States Government.

What do you think?

Written by Quizards Desk

Happy Quizzing.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিস্টোপিয়ান সাহিত্য - কুইজার্ডস (Quizards)

ডিস্টোপিয়ান সাহিত্য

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে কুসংস্কার - কুইজার্ডস (Quizards)

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে কুসংস্কার

Back to Top

Log In

Forgot password?

Don't have an account? Register

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

কুইজার্ডসের
আপডেট পেতে...

আপনার ইমেইল আইডিটি সাবমিট করুন এখানে

Don't worry, we don't spam

Close
Close
Send this to a friend