in

লেনিন: রুশ বিপ্লবের মূল নায়ক

Sometimes – history needs a push. – Lenin

লেনিন: নেতা হিসাবে উত্থান

আইন ব্যবসায় জড়িত হবার পর ভ্লাদিমির সামারার কাছে অবস্থিত একটি ফার্মে যোগ দেন। কৃষিজীবী সম্প্রদায় ও বিপদে পড়া নিঃস্ব মানুষদের রক্ষা করার জন্য তিনি একজন পাবলিক ডিফেন্ডার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন।

ইতোমধ্যে ভ্লাদিমির দর্শনশাস্ত্র ও রাজনীতি নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করেন। কার্ল মার্ক্সের লেখা দিয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত হন তিনি। মার্ক্সের কালজয়ী বই “Das Capital” তাঁর জীবনদর্শনই বদলে দেয়।

১৮৮৯ সালের জানুয়ারিতে ভ্লাদিমির আনুষ্ঠানিকভাবে মার্ক্সের অনুসারী হন ও নিজেকে একজন মার্ক্সবাদী বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। রাজধানী সেইন্ট পিটার্সবার্গে চলে আসার পর অন্য মার্ক্সবাদীদের সাথে কাজ করার পরিকল্পনা করেন তিনি। অবশ্য সে সময় তাঁরা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস নামে পরিচিত ছিলেন। কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য ছোট পুস্তিকা বা প্যামফ্লেট (Pamphlet) তৈরি করতে তাঁদের সাহায্য করেন ভ্লাদিমির। পাশাপাশি তিনি মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ন্যায্য পারিশ্রমিক ও অনুকূল কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের উৎসাহ দিতেন।

ইস্ক্রার প্রথম সংস্করণ - কুইজার্ডস
ইস্ক্রার প্রথম সংস্করণ

ভ্লাদিমিরের কর্মকাণ্ডকে রাশিয়ান সরকার খুব ভালো চোখে দেখেনি। ১৮৯৫ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। কয়েক মাস জেলে আটক থাকার পর তাঁকে সাইবেরিয়ায় তিন বছরের নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর সাথে দেখা হয় বন্ধু ও সহকর্মী নাদেঝদা ক্রুপস্কায়ার (Nadezhda Krupskaya), যাকে ১৮৯৮ সালে বিয়ে করেন তিনি।

লেনিনের স্ত্রী নাদেঝদা ক্রুপস্কায়া - কুইজার্ডস
নাদেঝদা ক্রুপস্কায়া

নাদেঝদার সাথে মিলে ভ্লাদিমির ব্রিটিশ সোশ্যালিস্ট সিডনি ও বিয়াট্রিস ওয়েবের লেখা “Industrial Democracy” বইটি রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেন। প্রায় একই সময়ে তিনি নিজের পারিবারিক নাম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাসন থেকে মুক্তি পাবার পর লেনিন জার্মানির মিউনিখ শহরে চলে যান সেখানকার একটি নতুন বিদ্রোহী জার্নাল ইস্ক্রার (English: The Spark) সম্পাদনার কাজে সাহায্য করার জন্য। পরবর্তীতে ক্রুপস্কায়াও তাঁর সাথে যোগ দেন।

১৯০২ সালে লেনিন লন্ডনে চলে আসেন। সেখানে তাঁর পরিচয় ঘটে লেভ দাভিদোভিচ ব্রনস্টেইন নামে এক রাশিয়ান ইহুদি যুবকের সাথে। প্রচণ্ড মেধাবী এ যুবক শীঘ্রই লেনিনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। ইতিহাসে তাঁর পরিচিতি লিওন ট্রটস্কি নামে।

বলশেভিক প্রোপাগান্ডা পোস্টার - কুইজার্ডস
বলশেভিক প্রোপাগান্ডা পোস্টার

লন্ডনেই লেনিন রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কার্স পার্টির (RSDWP) উপর ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। ভোটাভুটির পর পার্টিতে তাঁর অনুসারীরা পরিচিত হন বলশেভিক (The Majority Wing) হিসেবে। বাকিরা মেনশেভিক হিসেবে পরিচিতি পান। তখন থেকে বলশেভিকরা নিজেদের প্রলেতারিয়েত বা বিত্তহীন শ্রমজীবী শ্রেণীর রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করা শুরু করে।

পার্টি কংগ্রেসে লেনিন, ট্রটস্কি ও কামেনেভ - কুইজার্ডস
পার্টি কংগ্রেসে লেনিন, ট্রটস্কি ও কামেনেভ

১৯০৫ সালে রাশিয়াতে একটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিলো। কিন্তু শাসকবর্গ শীঘ্রই তা দমন করেন। লেনিন বিদ্রোহের খবর পেয়ে রাশিয়াতে ফিরে আসেন। স্বদেশে ফিরে তিনি প্রলেতারিয়েত আন্দোলনের দিকগুলি নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলেন। এবার তিনি কৃষকদের পক্ষেও কথা বলতে লাগলেন।

১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত উপনিবেশ (Overseas Territory) ও সাম্রাজ্য দখল নিয়ে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে লেনিন উদ্বিগ্ন ছিলেন। ১৯১৪ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তখন নিজ নিজ দেশের প্রতি অধিকাংশ সোশ্যালিস্টকে সমর্থন দিতে দেখে অবাক হন তিনি। তাঁর কাছে এ যুদ্ধ গরীবের রক্ত চুষে পুঁজিবাদীদের (Capitalist) সম্পদ বাড়ানো ছাড়া আর কিছু ছিলো না।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তৎকালীন প্রায় সব সাম্রাজ্যের পতন ডেকে এনেছিলো। এর প্রথম ভুক্তভোগী ছিলো রাশিয়ার রোমানভ রাজবংশ। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জার দ্বিতীয় নিকোলাস তার জেনারেলদের প্রভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এর ফলে রাশিয়ায় রাজতন্ত্রের অবসান হয়। দুমার (Restricted Russia Parliament) কিছু সদস্য একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করে। নতুন সরকারপ্রধান হলেন মডারেট সোশ্যালিস্ট আলেকজান্ডার কেরেনস্কি।

লেনিন প্রথম যখন বিদ্রোহের খবর জানতে পারেন, তখন তিনি সুইজারল্যান্ডে। জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি জার্মানির ভেতর দিয়ে ট্রেনে করে রাশিয়ায় যাবার অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেন। জার্মানরা খুশিমনেই তাঁকে সাহায্য করে এ ব্যাপারে। কারণ তাদের আশা ছিলো যে, কেরেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করলে রাশিয়া যুদ্ধ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিবে। সেক্ষেত্রে জার্মানি ইস্টার্ন ফ্রন্ট থেকে নিজের সৈন্যদের সরিয়ে পশ্চিমে নিয়ে আসতে পারবে, যা তাদেরকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করবে।

লেনিন গোপনে তাঁর কমরেডদের সাথে নিয়ে পেট্রোগ্রাড (সেইন্ট পিটার্সবার্গ) পৌঁছান ১৯১৭ সালের ১৬ এপ্রিল। দ্রুতই কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। তাঁদের দাবি ছিলো যে, যুদ্ধ থেকে রাশিয়ার অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করতে হবে; সৈন্যদের যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে রেহাই দিতে হবে; কৃষকদেরকে অবশ্যই তাদের চাষাবাদকৃত জমির মালিকানা দিতে হবে এবং কারখানার ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের খাদ্যের সংস্থান করতে হবে।

ফিনিশ রেলওয়ে কর্মীর ছদ্মবেশে লেনিন - কুইজার্ডস
ফিনিশ রেলওয়ে কর্মীর ছদ্মবেশে লেনিন

লেনিনের এমন আকস্মিক উত্থানে কেরেনস্কি রেগে গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দাড়িগোঁফ কামিয়ে এক ফিনিশ রেলওয়ে কর্মীর ছদ্মবেশ নিয়ে ফিলন্যান্ডে পালিয়ে যান লেনিন। এরপর ১৯১৭ সালের অক্টোবরে তিনি আবার পেট্রোগ্রাডে ফেরেন। ইতোমধ্যে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করে। হাজার হাজার সৈনিক যুদ্ধ থেকে পোস্ট ছেড়ে দিয়ে চলে আসছিলো। কারখানার ক্ষুধার্ত শ্রমিকেরা দখল করে নিচ্ছিলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের রাস্তাঘাট।

১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর ট্রটস্কির নেতৃত্বে পেট্রোগ্রাড সোভিয়েতরা কেরেনস্কি সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। তাদের সাথে “Red Guards” নামে পরিচিত এক দল সশস্ত্র বলশেভিক কর্মীও যোগ দেয়। ফলে শুরু হয় অক্টোবর বিদ্রোহ।

মাত্র একদিনের ব্যবধানে ৮ নভেম্বর লড়াই শেষ হয়ে যায়। পরাজয় হয় কেরেনস্কি সরকার। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন কাউন্সিল অফ পিপলস কমিসার্সের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। জীবনে কখনো কোন সরকারি দায়িত্ব পালন না করা লেনিন হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটির প্রধান হিসেবে। অথচ কয়েকদিন আগেও তিনি ছিলেন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো একজন আসামী!

অভিজ্ঞতার ঘাটতি সত্ত্বেও লেনিন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হলেন না। ব্যাংক, শিল্প ও ভূমির জাতীয়করণ করেন তিনি। এরপর ব্রেস্ত-লিতভস্ক (Brest-Litovsk) চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি ও অন্যান্য ক্ষমতাশালী দেশগুলোর সাথে একটা সমঝোতায় আসলেন। এটি ছিলো রাশিয়ার জন্য একটা বিব্রতকর চুক্তি। এর মাধ্যমে রাশিয়া নিজস্ব অনেক অঞ্চল হারায়। কিন্তু লেনিনের মতে দেশের শান্তি নিশ্চিত করা ও নিজেদের শক্তি ফিরে পাবার জন্য এই চুক্তি ছিলো অপরিহার্য। তিনি এও ঘোষণা করলেন যে, সাবেক জার সরকারের কোন ঋণ নতুন সরকার পরিশোধ করবে না। তাঁর সিদ্ধান্তে রাশিয়ার সকল ফরেন প্রোপার্টি বাজেয়াপ্ত হয়।

এসব কর্মকাণ্ডে তৎকালীন বেশির ভাগ ধনী অসন্তুষ্ট হয়। “Whites” নাম ধারণ করে তারা লেনিনের রেড আর্মির সাথে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তবে লেনিন কৃষকদেরকে তাঁর পাশে পেয়েছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ ও কারখানার শ্রমিকদের মন জয় করে নেন তিনি। ১৯২১ সালের শীতকালে শেষ হয় গৃহযুদ্ধ।

১৯২১ সাল নাগাদ লেনিন তাঁর নিজ সরকারের মধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্বের খোঁজ পান। নতুন নতুন এজেন্সি আর ব্যুরো সব জায়গায় গড়ে উঠছিলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এক বিশাল আমলাতন্ত্র জায়গা করে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন ব্যবস্থায়।

বেশির ভাগ আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন জোসেফ স্তালিন। স্তালিন ছিলেন একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলশেভিক যিনি দিন দিন নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছিলেন। কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই ট্রটস্কি তাকে চ্যালেঞ্জ করছিলেন। লেনিনের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকার পাশাপাশি দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্তালিন আর ট্রটস্কির তিক্ততা বাড়তে থাকে।

লেনিন তাঁর সরকারের চলমান অনিয়মগুলো বন্ধের চেষ্টা করছিলেন। বিশেষত স্তালিনের মধ্যে তিনি এমন একটি মানুষের সন্ধান পান যে মানুষকে অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে একদমই মাথা ঘামাতো না। লেনিনের মূল্যায়ন ঠিক ছিলো। স্তালিন পরবর্তীতে ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিতি পান।

১৯২২ সালের ডিসেম্বরে স্ট্রোকের শিকার হলে ধীরে ধীরে লেনিন এমন অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে দৈনন্দিন সরকারি কাজগুলো ঠিকভাবে করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। স্ত্রী ক্রুপস্কায়ার সাথে মস্কোর কাছে গোর্কিতে একটি ছোট্ট ঘরে দিন কাটাতে লাগলেন। যদিও বয়স ছিলো মাত্র ৫৪ বছর, তাঁর কথা বলার শক্তি একদমই ছিলো না। পরবর্তীতে আরেকটি স্ট্রোক তাঁর কথা বলার শক্তি পুরোপুরি কেড়ে নেয়।

১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি প্রাণঘাতী এক স্ট্রোকের শিকার হন লেনিন। অবসান ঘটে রাশিয়ান বিপ্লবের মহানায়কের।

লেনিনের সমাধি সৌধ - কুইজার্ডস
লেনিনের সমাধি সৌধ

জোসেফ স্তালিনের নির্দেশ অনুযায়ী লেনিনের মৃতদেহকে ক্রেমলিনের অদূরে মস্কোর রেড স্কয়ারে একটি লাল গ্রানাইটের সমাধিতে স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়ে নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছে, কখনো রোদে পুড়ে বা কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, তাঁর সমাধি একবার চোখে দেখার জন্য।

লেনিন ১৯২০ - কুইজার্ডস
লেনিন ১৯২০

লেনিনের নেতৃত্ব: কেমন ছিলেন রাশিয়ান বিপ্লবের কারিগর?

একজন নেতা হিসেবে লেনিন ছিলেন একই সাথে প্রশংসিত ও বিতর্কিত। দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল একবার লেনিনের সাথে এক ঘণ্টা কথা বলার পর তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন এটি। অন্যদিকে টাইম ম্যাগাজিনের করা বিংশ শতাব্দীর ১০০ জন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তালিকায় লেনিন স্থান পেয়েছেন। কমিউনিস্টদের চোখে তিনি “the greatest genius of mankind” হলেও সমালোচক ও ইতিহাসবেত্তাদের মতে তিনি ছিলেন একজন একনায়ক যিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটা নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন।

… very friendly, and apparently simple, entirely without a trace of hauteur… I have never met a personage so destitute of self-importance. – Bertrand Russell

Lenin deserves a lot of credit for the notion that the meek can inherit the earth, that there can be a political movement based on social justice and equality. – J. Arch Getty

He laid the foundations of dictatorship and lawlessness. Lenin had consolidated the principle of state penetration of the whole society, its economy and its culture. Lenin had practised terror and advocated revolutionary amoralism. – Robert Service

রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে লেনিনের বড় কিছু ভুল ছিলো। এসব ভুলের কারণে তাঁর শাসনকালকে একনায়কতন্ত্রের কাছাকাছি ধরা হয়। ১৯১৭ সালে ক্ষমতা দখলের পর তিনি চেকা (Cheka: Russian Secret Police) গঠন করেন। শুধু তাই নয়। ১৯১৮ সালে তাঁর উপর ব্যর্থ হত্যা চেষ্টার পর তিনি “Red Terror” নামে একটি প্রোগ্রাম হাতে নেন। এ প্রোগ্রামের চিন্তা প্রথম স্তালিনের মাথায় আসে। প্রোগ্রামটির উদ্দেশ্য ছিলো বিপ্লববিরোধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা। একই বছরের সেপ্টেম্বরে মস্কোতে লেনিন একটি তালিকা অনুমোদন করেন। এ তালিকায় ২৫ জন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি চাকরিজীবী আর ৭৬৫ জন হোয়াইট গার্ডকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ ছিলো।

১৯১৮ সালের শেষদিকে দলের দুইজন উঁচু সারির নেতা লেভ কামানেভ ও নিকোলাই বুখারিন রাশিয়ান সিক্রেট পুলিশ চেকার অন্যায্য কর্মকাণ্ড সীমিত করতে গেলে লেনিন পলিটব্যুরোর (সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি) মাধ্যমে তাদেরকে বাধা দেন। তিনি চেকার ক্ষমতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া পর্যন্ত উন্নীত করেন। ১৯২১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ চেকার লেবার ক্যাম্পে প্রায় ৭০,০০০ আসামী ছিলো। লেনিনের ভাষায় তারা ছিলো জনগণের শত্রু। এ থেকে বিরুদ্ধবাদের প্রতি তাঁর শক্ত অবস্থান বোঝা যায়।

রাশিয়ায় ১৯২১ সালের দুর্ভিক্ষে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এক্ষেত্রে লেনিনের বেশি কিছু করার ছিলো না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া বিধ্বস্ত হয় ও গৃহযুদ্ধে লেনিনের প্রায় সব রিসোর্স শেষ হয়ে যায়। তবে তিনি এ সময় ২৬৯১ জন পাদ্রি (Priest), ১৯৬২ জন সন্ন্যাসী (Monk) আর ৩৪৪৭ জন নানকে (Nun) ফাঁসিতে ঝোলান।

We must (…) put down all resistance with such brutality that they will not forget it for several decades. (…) The greater the number of representatives of the reactionary clergy and reactionary bourgeoisie we succeed in executing (…) the better.

গৃহযুদ্ধের সময় লেনিনের নিজ দলের প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে হোয়াইটদের প্রাণহানির সংখ্যা ছিলো ১৫ লক্ষ। ১৯১৭-২৩ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫০,০০০ থেকে ১০ লক্ষ মানুষ “Red Terror” প্রোগ্রামের কারণে মারা যায়। রাশিয়ান বিপ্লবের নেতা রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে যে খুব বিচক্ষণ ও সহনশীল ছিলেন না, তা এমন পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

লেনিনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিলো সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে তাঁর সম্যক ধারণা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, জনগণের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা যে কোন সামাজিক পরিবর্তনের পূর্বশর্ত। মানুষকে বুঝতে হবে বিদ্রোহের ফলে কী পরিবর্তন আসবে এবং কেন তা দরকার। সমাজের ভিত্তি এমন মজবুত হতে হবে যাতে এটি পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। তিনি বক্তৃতার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এ পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন।

শেষ করি লেনিনের জীবনী লেখা লুই ফিশারের বক্তব্য দিয়ে।

“[Lenin’s collected writings] reveal in detail a man with iron will, self-enslaving self-discipline, scorn for opponents and obstacles, the cold determination of a zealot, the drive of a fanatic, and the ability to convince or browbeat weaker persons by his singleness of purpose, imposing intensity, impersonal approach, personal sacrifice, political astuteness, and complete conviction of the possession of the absolute truth. His life became the history of the Bolshevik movement.”

What do you think?

Written by Tanjim Bin Faruk

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। বর্তমানে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। স্কুল জীবন থেকেই কুইজ করছি। কলেজে নটরডেম ব্লু টিমের হয়ে কুইজ করেছি। কুইজের সাথে জড়িত থেকে জ্ঞানের আলোটাকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিজেকে প্রস্তুত করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হাবল টেলিস্কোপ কুইজ - কুইজার্ডস

হাবল টেলিস্কোপ: মহাকাশ বিষয়ক কুইজ

নিউ হরাইজনস - কুইজার্ডস

নিউ হরাইজনস: প্লুটোকে জানার অভিযান